সেদিন অনেক দিন পর নানার বাড়িতে গেলাম। অনেকদিন পর বলতে প্রায় ৪/৫ মাস পর। নাগরিক কিংবা পড়ালেখার ব্যস্ততার কারণে আগের মত তেমন কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয়না। হয়ত সেদিনও যাওয়া হতোনা। নানার বাড়ির পাশে আমার চাচাত বোনের শ্বশুর বাড়িতে মেজবানের দাওয়াত ছিল। যার কারণে ঐদিকে যাওয়ার কারনে একসাথে নানুদের দেখে আসা।
নানার বাড়িতে ঢুকে নানুর সাথে কুশলাদি বিনিময় করার পর নানু আমাকে জিজ্ঞেস করলো- পড়ালেখার কি অবস্থা? আমি বললাম সামনে পরীক্ষা, দোয়া করিও। নানু বললো- পরীক্ষা দিতে দিতে তোর আর বিয়ে করা হবেনা। কথাটা শুনে আমার পাশে থাকা ছোট মামা, মামি আর পিচ্ছি কাজিনরা খুব করে হাসলাম। তখন নানুকে বললাম- গ্রাজুয়েশন শেষ হতে আর বেশি দিন নেই, তখন তোমরা না হয় তোমাদের নাতিনকে নিয়ে এসো।
নানার বাড়ির পাশেই রয়েছে সুন্দর একটা পুকুর। শৈশবে যখন নানার বাড়িতে যেতাম তখন কাজিনরা মিলে পুকুরে লাফালাফি করে গোসল করার স্বাদ মিঠাতাম, পানিতে লাফালাফি করার কারণে চোখ যখন লাল হয়ে যেত তখন পুকুরে দুষ্টুমির পর্ব শেষ হত । বিশেষ করে যখন বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হত তখন কয়েক দিনের জন্য নানার বাড়িতে গিয়ে থাকা হত। কারণ ঐ সময়ে সব কাজিনরা নানার বাড়িতে কয়েকদিনের জন্য যেতাম। যাওয়ার সাথে সাথে শুরু হত আমাদের দস্যি-পনা। নাস্তা করেই কাজিনদের সাথে বের হয়ে পড়তাম দৌড়াদৌড়িতে। নানার বাড়ির পাশেই বিল থাকার কারণে বিলের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়াতাম। বিলের পাশেই রয়েছে খাল। সেই খালে সাতার কাটতাম। শীতের মৌসুমে বিলে ক্রিকেট-ফুটবল খেলতাম। সারাদিনের এই দস্যি-পনা শেষে রাতে যখন ঘুমাতে যেতাম তখন শুরু হত অন্যান্য কাজিনদের জ্বীন-ভূতের ভয় লাগানোর পালা । কাজিনদের মনে জ্বীন-ভূতের ভয় ঢুকিয়ে দেয়ার কারণে পরেরদিন সকালে মা'র বকা শুনতে হত । কারণ মা'র কাছে কাজিনদের কর্তৃক আমার বিরুদ্ধে নালিশ যেত যে আমি কাজিনদের মনে জ্বীন-ভূতের ভয়-ভীতির সঞ্চার করেছি।
কিন্তু নানার বাড়ির আগের সেই জৌলুস এখন আর নেই। কারণ সময়ের পরিক্রমায় সব কিছু যেন পাল্টে গেছে। নানু ভাইয়াও মারা গিয়েছে আজ প্রায় ৩ বছর হলো । আগের মত যাওয়া হয়না নানার বাড়িতে। তাছাড়া দিন দিন বয়সটা বাড়ছে। আগের সেই বয়স আর নেই যে মন চাইলেই শৈশবের মত ছুটাছুটি করবো।
সেদিন যখন নানার বাড়িতে গেলাম তখন কেন জানি শৈশবের কথা খুব করে মনে পড়ে গেল । যে পুকুরে গোসল করার সময় অসম্ভব দুষ্টুমি করতাম সেই পুকুর ঘাটে বেশ কিছু সময় বসে ছিলাম। কেন জানি নানার বাড়ির পুকুরটা আমার বেশ ভাল লাগে। পুকুরের চারিদিকে গাছ, চমৎকার মৃদু হাওয়া। দেখলাম ছোট ছোট মাছ আপন খুশিতে চষে বেড়াচ্ছে দল-বল নিয়ে।
নানার বাড়িতে যাওয়ার আগে একই দিন সকালে নানুকে ফোন করেছিলাম যে আমরা ঐদিকে যাব। তাই নানুকে অনুরোধ করলাম- কয়েকদিনের জন্য আমাদের বাড়িতে যেন বেড়াতে আসে। চাচাত বোনের শ্বশুর বাড়ি থেকে মেজবানের দাওয়াত খেয়ে আসার পথে নানার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে সাথে করে নানুকে নিয়ে এসেছিলাম আমাদের বাড়িতে।
নানার বাড়িতে যাওয়ার আগে একই দিন সকালে নানুকে ফোন করেছিলাম যে আমরা ঐদিকে যাব। তাই নানুকে অনুরোধ করলাম- কয়েকদিনের জন্য আমাদের বাড়িতে যেন বেড়াতে আসে। চাচাত বোনের শ্বশুর বাড়ি থেকে মেজবানের দাওয়াত খেয়ে আসার পথে নানার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে সাথে করে নানুকে নিয়ে এসেছিলাম আমাদের বাড়িতে।
2 comments:
নস্টালজিক হয়ে পড়লাম আপনার পোষ্টটি পড়ার পর। শৈশবের সেই দিনগুলি যদি ফিরে আসতো!!!
শৈশবের সেই স্মৃতিময় দিনগুলি ফিরে পেতে কার না মন চায়! ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন