যাযাবর শিকারি ও ফলমূল সংগ্রহকারী মানুষ যখন চাষাবাদ করতে শিখে এবং যুদ্ধবদ্ধ হয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকে তখন থেকেই মানবজাতির সভ্যতার যাত্রা। যেখানে জমি উর্বর ও ফসল ফলে পর্যাপ্ত এবং উদ্ধৃত ফসল দিয়ে অনুৎপাদনকারী প্রশাসন ও কারিগর শ্রেণীকে পোষণ করা যায় সেখানেই মানুষ বসবাস শুরু করে। সম্ভবত দুই নদীর মধ্যবর্তী উর্বর এলাকায় মানুষের প্রথম সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। প্রাচীন মেসোপোটেমিয়া অর্থাৎ আজকের ইরাকের দজলা ও ফোরাতের মধ্যবর্তী এলাকায় গড়ে উঠে প্রথম সভ্যতা। গ্রিক ভাষায় মেসোপোটেমিয়া শব্দের অর্থ হলো দুই নদীর মধ্যবর্তী।
প্রাচীন মেসোপোটেমিয়ার মানচিত্র |
খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ বছর আগে এই এলাকায় সুমেররা প্রথম বসতি স্থাপন করে। কৃষি অর্থনীতির উপর ভিত্তি করে তারা একটি সত্যিকার নগরী গড়ে তোলায় অনুমান করা যায় যে তারা শ্রমবিভাগ জানত। উরুক ও লাগাশ ছাড়াও তারা অনেকগুলো নগরী প্রতিষ্ঠা করেছিল। এসব শহরে ছিল সুন্দর সুন্দর দালানকোঠা, জনসাধারণের জন্য পানি ও পয়ঃনিস্কাশনের ব্যবস্থা।
"উরুক" নগরী বর্তমান দক্ষিণ ইরাকের ইউফ্রেটিস নদীর পূর্ব পাশে অবস্থিত। "উরুক" হলো পৃথিবীর সর্বপ্রথম শহর যেটি প্রথমে মেসোপোটেমিয়া পরবর্তীতে ব্যাবিলন সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত হয়। এই শহরে প্রায় ৫০,০০০ মানুষ বাস করতো। "লাগাশ" নগরী বর্তমান দক্ষিণ-পূর্ব ইরাকে এবং প্রাচীন উরুকের পূর্ব পাশে অবস্থিত। এছাড়া এই লাগাশ নগরী ইউফ্রেটিস নদী ও তিগ্রিস নদীর মিলনস্থলের উত্তর-পশ্চিম কিনারায় অবস্থিত।
এটাই সেই উরুক নগরী যেটি পৃথিবীর সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত শহর |
সুমেরীয়রাই প্রথম লেখার পদ্ধতি আবিস্কার করে। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৩১০০ বছর আগে থেকে তারা কাদামাটির টালির উপর তথ্য লিপিবদ্ধ করা শিখেছিল। তাদের এই লিপি কিউনিফর্ম বা কীলকলিপি হিসিবে পরিচিত। এই লিপিতে লেখা হাজার হাজার টালি খুঁজে পাওয়া গেছে। সমাধিতেও তারা রেখে দিত নানা ধরণের মূল্যবান সামগ্রী। এগুলো দেখে তাদের ঐশ্বর্য, রুচিশীলতা ও কারিগরি দক্ষতা অনুমান করা যায়।
খ্রিস্টপূর্ব ২৩০০ সালে আরব থেকে আগত সেমীয়রা ধীরে ধীরে মেসোপোটেমিয়ার সুমের সভ্যতা ধবংস করে দেয়। তারা পরে গড়ে তোলে আসিরিয়া ও ব্যাবিলনিয়া সাম্রাজ্য।
(ফে ফ্রাংকলিন সম্পাদিত হিস্ট্রিজ টাইমলাইন অবলম্বলনে)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন