চাটিকিয়াং রুমানের ব্লগ

বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১১

ফিরে দেখা ডিসেম্বর (১০-১৬)



১০ ডিসেম্বর
মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে পাক হানাদার মুক্ত হয় ময়মনসিংহ, মাদারীপুর ও নড়াইল ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর ঘাঁটিগুলোতে ভারতীয় যুদ্ধবিমান বোমা হামলা চালায়। এরই সূত্র ধরে পাকিস্তানের অন্যতম সহযোগী চীন সেনা মোতায়েন করে সিকিম-ভুটান সীমান্তে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধকে নস্যাৎ করার উদ্দেশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের নির্দেশে বঙ্গোপসাগরে রওনা হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ৭ম নৌবহর মালাক্কা প্রণালীতে অবস্থান নেয়। ভারতীয় বিমানবাহিনীর বোমা হামলা ঠেকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে পাকিস্তান।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে বন্দরনগরীর আউটার স্টেডিয়ামে আজ থেকে শুরু হচ্ছে বিজয় মেলা। ই বিজয় মেলার আয়োজনে সাবেক মেয়রের সঙ্গে মহাজোটভুক্ত বাম ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও যুক্ত রয়েছেন।

আজ বিকেল ৩টায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ. বি. তাজুল ইসলাম বিজয় শিখাপ্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে মেলার উদ্বোধন করার কথা মেলা চলবে ২৫শে ডিসেম্বর পর্যন্ত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যাতে কেউ নস্যাৎ করতে না পারে সে উদ্দেশ্যে এবারের মেলার মূল স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে বীর বাঙ্গালি এক হও, যুদ্ধাপরাধের বিচার করো

মেলা কমিটির মহাসচিব ও নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম জানান, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরাই এই বিজয় মেলার লক্ষ্য। মেলায় অংশ নেয়ার জন্য ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, তোফায়েল আহমেদ, সাংসদ রাশেদ খান মেনন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সহ আরো অনেককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।


১১ ডিসেম্বর
মুক্তিযুদ্ধের এই সময়ে চারিদিক থেকে মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের খবর আসতে থাকে আর একের পর এক জায়গায় পাকিস্তান বাহিনী নাস্তানাবুদ হতে লাগলো। আজকের এই দিনে কুষ্টিয়া পাক হানাদার মুক্ত হয়। ২৫শে মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী কুষ্টিয়ায় অবস্থান নেয়। কিন্তু ১ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে কুষ্টিয়া। পরবর্তীতে ১১ এপ্রিল ভেড়ামারায় এক যুদ্ধে পাক বাহিনী আবারো দখলে নেয় কুষ্টিয়া শহর। অবশেষে আজকের এই দিনে কুষ্টিয়া শত্রুমুক্ত হয়।

মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকা মুক্ত করতে থাকে। এই দিন মিত্রবাহিনী হিলি সীমান্তে ব্যাপক প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। সন্ধ্যার দিকে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় শক্তিশালী পাক হানাদার ও তাদের দোসরদের ঘাঁটির উপর তীব্র আক্রমণ চালায়। সারারাত ধরে চলতে থাকে যুদ্ধ। যৌথবাহিনীর প্রচন্ড হামলার মুখে ঠিকতে না পেরে অবশেষে ভোরের দিকে পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করে।

এদিকে ইয়াহিয়া খান মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সাহায্য কামনা করেন। কিন্তু নিক্সন থাকেন নীরব। কারণ সারা বিশ্ব এটা ভালোভাবে বুঝতে পারে যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় সময়ের ব্যাপার মাত্র।

বিদেশী নাগরিকরা যাতে ঢাকা ত্যাগ করতে পারে সে উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের বিশেষ অনুরোধে যৌথবাহিনী এই দিন সকালে ঢাকায় সাময়িকভাবে বিমান হামলা বন্ধ রাখে।




১২ ডিসেম্বর
মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনীর পরাজয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু তারা যুক্তরাষ্টের সাহায্যের জন্য মুখিয়ে থাকে। আর অন্যদিকে তাদের মিত্র সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। ১২ ডিসেম্বরের আগের দিন অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর রাশিয়ার ওয়াশিংটন প্রতিনিধিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার সাবধান করে দিয়ে বলেন, “আগামীকাল ভারতকে অবশ্যই যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য করাতে হবে। অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্র নিজেই প্রয়োজনীয় সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

পরেরদিন অর্থাৎ ১২ ডিসেম্বর যুদ্ধবিরতি ঘোষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা দীর্ঘ বক্তব্য দেয়ার পর উক্ত অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়। অন্যদিকে ৯ই ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্দেশে বঙ্গোপসাগরে রওনা দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের ৭ম নৌবহর এই দিন বঙ্গোপসাগর থেকে মাত্র ২৪ ঘন্টার দূরত্বে গভীর সমুদ্রে এসে অবস্থান নেয়।

৭১ এর এই দিনে বুদ্ধিজীবি হত্যার নীল-নকশা তৈরি করা হয়। সেই দিন রাতে প্রাদেশিক সরকারের বেসামরিক উপদেষ্টা মেজর রাও ফরমান তাদের এ দেশীয় দোসর আল-বদর ও আশ-শামসের কেন্দ্রীয় অধিনায়কদের সদর দফতরে ডেকে পাঠান। তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় এক গোপন বৈঠক। এই গোপন বৈঠকে বুদ্ধিজীবি হত্যার নীল-নকশা প্রণয়ন করা হয়। মেজর জেনারেল রাও ফরমান তাদের হাতে বুদ্ধিজীবিসহ বিশেষ বিশেষ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের নামের তালিকা তুলে দেন। এই নীল-নকশা অনুযায়ী একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর হত্যা করা হয় জাতির মেধাবী সন্তানদের।

মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে এ.পি.আই. এর জেনারেল ম্যানেজার বিশিষ্ট সাংবাদিক নিজামউদ্দিনকে আল-বদর বাহিনী ধরে নিয়ে যায়। পাকিস্তানের দোসরা যখন নিজামউদ্দিনের বাসায় হানা দিয়েছিল তখন তিনি বিবিসির জন্য রিপোর্ট তৈরি করছিলেন। ঐ অবস্থায় ধরে নিয়ে গিয়ে আল-বদর বাহিনী তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

১৯৭১ সালের এই দিনে সকাল বেলায় শত্রু মুক্ত হয় নরসিংদী। দিনাজপুরের বিরল থানা বহলা গ্রামে এই দিন পাক হানাদার বাহিনী এক নৃশংস গণহত্যা চালায়। ১২ই ডিসেম্বর ঐ গ্রামে পাক বাহিনীর একটি দল অনুপ্রবেশ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে টিকতে না পেরে পাকিস্তান বাহিনী এক পর্যায়ে বহলা গ্রামে ঢুকে পড়ে। এ সময় তারা গ্রামবাসীদের গ্রাম ছেড়ে চলে যাবার নির্দেশ দেয়। গ্রামবাসীরা গ্রাম ছেড়ে যাবার জন্য যখন প্রস্তুতি নেয় তখন পাকিস্তান বাহিনী আবার তাদেরকে একত্রিত হবার নির্দেশ দেয়। ঐ মূহুর্তে মাগরিবের নামাজের সময় হয়। অনেকে মাগরিবের নামাজ পড়ার জন্য নামাজের কাতারে দাঁড়ান। সবাই যখন নামাজের কাতারে দাঁড়ালেন তখন পিছন দিক থেকে ব্রাশ ফায়ার করে পাক হানাদার বাহিনী। তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে শহীদ হন ৩৭ জন। মাত্র কয়েকজন গ্রামবাসী সেদিনের নৃশংস গণহত্যা থেকে রেহাই পান।


১৩ ডিসেম্বর
একাত্তরের এই দিনে বগুড়ার কাহালু উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার অধ্যক্ষ হোসেন আলী সহযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে ১৩ ডিসেম্বর ভোর ৪টায় পশ্চিম কাহালুর কাওড়াশ এলাকা থেকে দুপুর ১২টার পর কাহালু থানা চত্বরে পৌঁছেন। সেখানে পৌঁছে তিনি প্রথমে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং কালালু উপজেলাকে শত্রু মুক্ত ঘোষণা করেন।

অধ্যক্ষ হোসেন আলী তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে কাহালুর কড়িবামুজা এবং শিকড় এলাকায় দুইটি সম্মুখ যুদ্ধসহ বিভিন্ন এলাকায় পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে বহু যুদ্ধ করেন। তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা কাহালু উপজেলার শীতলাই থেকে চারমাথা পর্যন্ত এলাকায় বিগ্রেডিয়ার তোজাম্মল হোসেন ও মেজর জাকির সহ শতাধিক পাকিস্তানি সৈন্যকে একদিনে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করায়। আত্মসমর্পণ করানোর পর তাদেরকে বগুড়ার গোকুল ক্যাম্পে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।

কাহালু উপজেলার লক্ষ্মীপুর, ডোমরগ্রাম, জয়তুল, গিরাইল, নশিরপাড়া, পালপাড়া গ্রামের শতাধিক নিরীহ মানুষকে পাক হানাদার বাহিনী একদিনে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে।

৭১ এর এই দিনে পাক হানাদার মুক্ত হয় মানিকগঞ্জ। কৌশলগত কারণে মানিকগঞ্জ শত্রুদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মানিকগঞ্জের বিভিন্ন যুদ্ধে ৫৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ৯ জন মুক্তিযোদ্ধা পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এই অঞ্চলের যুদ্ধে বীরত্ব পূর্ণ অবদান রাখার জন্য ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা বীরত্বের খেতাব পান। তারমধ্যে বীর উত্তম খেতাব পান- স্কোয়াড্রন লিদার (অব.) বদরুল আলম। বীর প্রতীক খেতাব পান- শহীদ মাহফুজুর রহমান, আতাহার আলী এবং ইব্রাহীম খান।




১৪ ডিসেম্বর
১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস। স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় উৎসবের জন্য যখন সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের দোসরদের সহায়তায় জাতির সূর্য সন্তানদের হত্যার নেশায় মেতে উঠে। বাঙালি জাতির সেরা শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চিকিত্সক, প্রকৌশলীদের আজকের এই দিনে হত্যা করে পাক বাহিনী ও তাদের দোসররা।

পাক বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর, আশ-শামসরা যখন বুঝতে পারলো যে মুক্তিযুদ্ধে তাদের পরাজয় খুবই নিকটে তখন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা করে পাক বাহিনী। ৭১ সালের ১২ই ডিসেম্বর প্রাদেশিক সরকারের বেসামরিক উপদেষ্টা মেজর রাও ফরমান তাদের দোসরদের সাথে সদর দফতরে রাতে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হয়। সেখানে প্রণয়ন করা হয় বুদ্ধিজীবি হত্যার নীল-নকশা। সেই নীল-নকশা অনুযায়ী হত্যা করা হয় জাতির মেধাবী সন্তানদের।

মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে শত্রুমুক্ত হয় সাভার, দিনাজপুর, বগুড়ার শিবগঞ্জ, জয়পুরহাটের পাঁচবিবিসহ চট্টগ্রামের বান্দরবন।


১৫ ডিসেম্বর
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পুরোপুরি কোণঠাসা হয়ে পড়ে ৭১-এর এই দিনে। চারদিক থেকে বিভিন্ন জায়গা শত্রুমুক্ত হওয়ার খবর আসতে থাকে। বীর সন্তানরা তাদের মূল লক্ষ্য রাজধানী ঢাকার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। সারা দেশের বেশির ভাগ জায়গায় উড়তে থাকে লাল-সবুজের প্রিয় মাতৃভূমির পতাকা।

মুক্তিযোদ্ধারা যখন প্রিয় দেশকে শত্রুমুক্ত করে বিজয়ের একদম দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছিল তখন পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দালালরা বেপরোয়া হয়ে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে যা ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের আগ পর্যন্ত অব্যাহত রাখে। কিন্তু পুরোপুরি কোণঠাসা পাকিস্তানি বাহিনী শুধু নিশ্চিত হতে চাইছিল যে আত্মসমর্পণের সময় তাদের হত্যা করা হবে না কারণ পাকিস্তানকে বাঁচানোর জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের নির্দেশে বঙ্গোপসাগরে রওনা দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের ৭ম নৌবহর যখন বঙ্গোপসাগর থেকে মাত্র ২৪ ঘন্টার দূরত্বে গভীর সমুদ্রে এসে অবস্থান করছিল তখন ভারতীয় নৌবাহিনীর সহায়তায় ১৫ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের রণতরীর ২০টি জাহাজ ভারত মহাসাগরে অবস্থান নেয়। এরপর যুক্তরাষ্টের ৭ম নৌবহর যুদ্ধে অংশ নেয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখে। যার ফলে পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত যে বিদেশি সাহায্যটুকু পাওয়ার আশা করেছিল তা নিমিষেই শেষ হয়ে যায়।

৭১-এর এই দিনে পাক বাহিনী চট্টগ্রামে তাদের ঘাঁটি ছেড়ে রাউজান হয়ে শহরের দিকে পালিয়ে যায়। এর ফলে শত্রুমুক্ত হয় রাঙ্গুনিয়া। এই দিনে আরো শত্রুমুক্ত হয় পার্বতীপুর, নীলফামারী, গোয়ালন্দ। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধারা সন্ধ্যার দিকে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে হানাদার বাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। সারারাত ধরে চলতে থাকে যুদ্ধ। অন্যদিকে বগুড়া জেলা ও পার্বত্য জেলার খাগড়াছড়ি শত্রুমুক্ত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে শহীদ হন বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। এই বীরশ্রেষ্ঠ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে যোগ দেন মুক্তিবাহিনীর ৭ নং সেক্টরে। তার গুনাবলীর কারণে খুব অল্প সময়ে তিনি সকলের শ্রদ্ধাভাজন হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর দিনের বেলায় অপারেশনের পরিকল্পনা করতেন আর রাতের বেলায় গেরিলাদের সাথে অপারেশনে বের হতেন।

রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঘাঁটি হানাদার মুক্ত করার যুদ্ধে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মহানন্দা নদী পার হয়ে যখন তিনি একের পর এক শত্রু বাংকার দখল করে জীবনের পরোয়া না করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তখন হঠাৎ শত্রুর একটি গুলি বিদ্ধ হয় তার কপালে এবং তিনি শহীদ হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার অন্তর্গত ঐতিহাসিক গৌড়ের সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন জাতির এই বীর সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর।




১৬ ডিসেম্বর
মহান বিজয় দিবস। বাঙ্গালী জাতির জন্য গৌরব, অহঙ্কার ও সবচেয়ে আনন্দপূর্ণ দিনপাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে সূচীত বাংলাদেশের বিজয়। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে পৃথিবীর বুকে জন্ম হয় স্বাধীন-সার্বভৌম নতুন একটি দেশ, বাংলাদেশের। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে বাঙ্গালী জাতি।

৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত ও ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলার বীর সন্তানদের কাছে পরাজিত হয়ে রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) অবনত মস্তকে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ৭১-এর এই দিনে বিকেল সাড়ে ৪টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সামনে হানাদার বাহিনী অস্ত্র ফেলে দিয়ে অবনত মস্তকে দাঁড়াতে বাধ্য হয়।

একাত্তরের এই দিনে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক কর্মকর্তা জন কেলি সকাল বেলায় ঢাকা সেনানিবাসের কমান্ড বাঙ্কারে পৌঁছেন। সেখানে লে. জেনারেল নিয়াজীকে পাওয়া গেল না। বিধ্বস্ত অবস্থায় পাওয়া গেল জেনারেল রাও ফরমানকে। রাও ফরমান জন কেলিকে বলেন, মিত্রবাহিনীর কাছ থেকে তারা আত্মসমর্পণের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। কিন্তু মিত্রবাহিনীর সাথে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় এই খবরটি তাদের জানাতে পারছে না।

এই সময় জন কেলি রাও ফরমানকে জাতিসংঘের বেতার সংকেত ব্যবহারের প্রস্তাব দেন। এ সময় আত্মসমর্পণের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয় বিকেল সাড়ে ৪টা। ঢাকাবাসী যখন এই আত্মসমর্পণের সময় জানতে পারল তখন তারা মেতে উঠে আনন্দ উল্লাসে। তাদের উল্লাস আর দেখে কে!

এই দিন সকাল ১০:৪০ মিনিটে মিত্রবাহিনী ঢাকায় প্রবেশ করে। তার আগেই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী মিরপুর ব্রিজ দিয়ে ঢাকায় ঢুকে পড়ে। বিকেল বেলায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রস্তুত হলো এক ঐতিহাসিক বিজয়ের মুহূর্তের জন্য। বিকেল সাড়ে ৪টায় লে. জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বে আত্মসমর্পণ করে ৯১ হাজার ৫৪৯ জন পাক হানাদার বাহিনীর সৈন্য। মেজর জেনারেল জ্যাকবের তৈরি করা আত্মসমর্পণের দলিলে বিকালে সই করেন লে. জেনারেল নিয়াজি ও লে. জেনারেল জগজি সিং অরোরা এ সময় মুজিবনগর সরকারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ক্যাপ্টেন এ.কে. খন্দকার। জন্ম নেয় আমাদের স্বাধীন-সার্বভৌম প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১১

ফিরে দেখা ডিসেম্বর (১-৯)




১ ডিসেম্বর
বিজয়ের মাস, গৌরবের মাস ডিসেম্বরের শুরু। ১৯৭১ সালের এই মাসেই দীর্ঘ ৯ মাস পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর সূচিত হয় মহান বিজয়ের গৌরবময় অধ্যায়, আসে আমাদের কাঙ্খিত বিজয়।

পাকিস্তানী শাসক শ্রেণী থেকে মুক্ত হওয়া এই মহান বিজয়ের মাস একই সাথে স্বজন হারানো শোকার্ত মাস। বাংলার শহীদ বীর সন্তানদের স্মরণে এই মাস নানান কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে পালিত হবে।

৭১-এ এই সময়ে মুক্তিযুদ্ধ সর্বাত্মক রূপ পায়। মুক্তিবাহিনীর কাছে দিন দিন কোনঠাসা হয়ে পড়ে পাক বাহিনী। একের পর এক প্রবল আক্রমণের মুখে পিছু হটতে থাকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ১৯৭১ সালের এই দিনে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, গেরিলা সন্দেহে জিঞ্জিরার অনেক যুবককে সারিবদ্ধভাবে দাড় করিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বুড়িগঙ্গার অপর পাড়ের এই গ্রামটিতে অন্তত ৮৭ জনকে হত্যা করেছে পাক হানাদার বাহিনী। নারী, শিশুরা পর্যন্ত তাদের নিষ্ঠুরতার হাত থেকে রক্ষা পায়নি।

এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পার্লামেন্টের উচ্চ পরিষদে বক্তৃতাকালে উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইয়াহিয়া খানের প্রতি বাংলাদেশ থেকে পাকিস্থানি সৈন্য প্রত্যাহারের আহবান জানান। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে পাক বাহিনী সিলেটের শমশেরনগর থেকে পালাতে থাকে। এ সময়ে মুক্তিবাহিনী টেংরাটিলা ও দুয়ারাবাজার শত্রু মুক্ত করে। মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত আক্রমণের ফলে পাক বাহিনী সিলেটের গারা, আলিরগাঁও, পিরিজপুর থেকে তাদের বাহিনী গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়।

জুলফিকার আলী ভুট্টো দুমাস আগে ঢাকায় পিপলস পার্টির যে অফিস উদ্ভোধন করে সেখানে বোমা বিস্ফোরনের ফলে তা মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এদিনে।


২ ডিসেম্বর
গতকাল (১ ডিসেম্বর’১১) নানান অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে বিজয় মাসের প্রথম তারিখ। স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তীতে শিল্পকলা একাডেমী ৪০ হাজার মোমবাতি জ্বালিয়ে উদযাপন করেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০ বছর। বুধবার রাত ১২টা ১ মিনিটে একাডেমী ভবন ঘিড়ে এই ৪০ হাজার মোমবাতি জ্বালানো হয়। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। এ দিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ১লা ডিসেম্বরকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস ঘোষাণার আহ্বান জানিয়েছে। বিজয়ের মাসের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।

একাত্তরের এই সময়ে বাংলার দামাল সন্তানেরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। প্রতিদিন কোনঠাসা হতে থাকে পাক বাহিনী। নভেম্বরের শুরু থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করে। সীমান্ত এলাকাগুলোতে সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করলে মুক্তিবাহিনীর সাথে যোগ দেয় ভারতীয় বাহিনী। আর এদিকে দেশ জুড়ে চলছিল প্রতিরোধ। প্রতিদিন মুক্তিবাহিনীর কাছে নাস্তানাবুদ হচ্ছিল পাক বাহিনী।

মুক্তিযোদ্ধারা দিনাজপুরে আকস্মাৎ এমন এক হামলা চালায় যার জন্য প্রস্তুত ছিল না পাকিস্তান বাহিনী। সেখানে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে একত্রিত হয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী পঞ্চগড় মুক্ত করে এগিয়ে চলছিল ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে। মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় রামপুরা ও মালিবাগে এদিন ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন। আন্তর্জাতিক মিডিয়া সমূহে তখন মুক্তিবাহিনীর সাফল্যের খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়।

৭১ সালের এ দিনে মুক্তিযোদ্ধারা যখন রাজধানী ঢাকাকে দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে ঢাকার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন পাকিস্তান বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে চালিয়ে যাচ্ছিল নানা অপপ্রচার। এ দিকে প্রিয় মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার প্রত্যয়ে প্রতিদিন শহীদ হচ্ছিল হাজারো মুক্তিকামী জনতা। হানাদার বাহিনীর অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছিল না মা-বোনেরা।

নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রামের পথে পথে শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ। আখাউড়া রেল স্টেশনে চলে সম্মুখযুদ্ধ। একাত্তরের এই দিনে ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় গণহত্যা চালায় পাকবাহিনী।





৩ ডিসেম্বর
সারাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিজয় উৎসব। দেশের নানা জায়গায় শুরু হয়েছে বিজয় মেলা। বিজয়ের উল্লাসে উদ্বেলিত আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা সহ শিশু-কিশোর সবাই।

৭১ এর ডিসেম্বর মাসে মুক্তিবাহিনীর একেরপর এক হামলায় পাক হানাদারেরা তখন দিশেহারা। এই মাসের শুরু দিক থেকে বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের বেশে সামনে দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। মুক্তিবাহিনীর সাথে পেরে উঠতে না পেরে পাকিস্তান বাহিনী হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ, নির্যাতন বাড়িয়ে দিল আগের চাইতে বেশি পরিমাণে।

১৯৭১ সালের এই দিনে ভারতে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারতের মধ্যেকার যুদ্ধ বলে চালিয়ে দিয়ে জাতিসংঘের কাছ সুবিধা আদায় করা। তারা চেয়েছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা আদায়। পাকিস্তান চেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধকে যদি দুই দেশের মধ্যেকার যুদ্ধ হিসেবে দেখানো যায় তাহলে জাতিসংঘ যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার জন্য উভয় পক্ষকে বাধ্য করবে এবং উভয় দেশে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করবে। আর এতে করে পাকিস্তান বাহিনী বাংলাদেশের মাটিতে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবস্থান করবে। এই উদ্দেশ্যে পাকিস্তান বিমানবাহিনী এই দিন বিকেলের দিকে ভারতের অমৃতসর, পাঠানকোর্ট, শ্রীনগর, অবনত্মীপুর, উত্তরালই সহ আগ্রার বিমান ঘাঁটিতে আক্রমণ করে। ভারতের উপর পাকিস্তান বাহিনীর এই হামলা পরিপ্রেক্ষিতে রাত সাড়ে ১১টায় ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের উপর পাল্টা হামলা চালায় এই দিনে।

এদিনে তৎকালীন পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন জানায়, বাংলাদেশ সম্পূর্ণ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদে যেকোনো যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো দিবে তারা।

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে বরগুনা শত্রুমুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় বরগুনার বিভিন্ন জায়গায় পাক হানাদার বাহিনী পৈশাচিক নারী নির্যাতন ও নির্বিচারে গণহত্যা চালায়।


৪ ডিসেম্বর
১৯৭১ সালের এই সময়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি অঙ্গনে বাংলাদেশের জন্য সময়টুকু ছিল অস্থির আর উদ্বেগের। এই দিনে জাতিসংঘে চলে চরম উত্তেজনা। কারণ পাকিস্তানের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সিনিয়র জর্জ বুশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারতের মধ্যেকার যুদ্ধ হিসেবে সবার সামনে উপস্থাপন করা। যার ফলে পাকিস্তান বাহিনী অনির্দিষ্ট কালের জন্য বাংলাদেশে অবস্থান করার সুযোগ পাবে। যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দাবি করে যে, “এই মূহুর্তে ভারত ও পাকিস্তান নিজ নিজ সীমান্তের ভেতর সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে।” উল্লেখ্য, জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করার জন্য, মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারতের মধ্যেকার যুদ্ধ হিসেবে জাতিসংঘে উপস্থাপন করার জন্য পাকিস্তান বিমানবাহিনী ৭১ এর ৩ ডিসেম্বর ভারতের বেশ কয়েকটি জায়গায় বিমানহামলা চালায় এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে একই তারিখে রাতের বেলা ভারত পাকিস্তানের উপর হামলা চালায়।

এই যখন উৎকন্ঠাময় অবস্থা তখন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ লিখিত এক পত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের আহবান জানান।

যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাশ করানো জন্য যুক্তরাষ্ট্র তখন বৈঠকের পর বৈঠক করছে। সবাই যখন চরম উদ্বেগ আর চিন্তার মধ্যে ছিলেন তখন আসলো খুশির সংবাদ। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটো প্রধানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে ভেস্তে যায়। পোল্যান্ডও এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। তবে আরো একটি আনন্দের সংবাদ ছিল যে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের এই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকা।

এই প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট যখন হেরে গিয়েছিল তখন পক্ষন্তরে পাকিস্তানের পরাজয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ তীব্র আক্রমণের মুখে বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গা থেকে পালানোর পথ খুঁজতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

এ সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি জামাতে ইসলামীর আমীর মাওলানা আবুল আলা মওদুদী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে জানান যে, “প্রতিটি দেশপ্রেমিক মুসলমান প্রেসিডেন্টের সাথে রয়েছে।”

মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে লক্ষীপুর হানাদার মুক্ত হয়। যুদ্ধের পুরোটা সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর, আশ-শামস বাহিনীর হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষনের ঘটনায় লক্ষীপুর ছিল বিপর্যস্ত।

একাত্তরের এই দিনে ৩নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা শমশেরনগর বিমান বন্দর এবং আখাউড়া রেল স্টেশন দখল করেন। ৮নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা দখল করেন মেহেরপুর। এছাড়া ১১নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে কামালপুর নিজেদের আয়ত্তে আনেন।





৫ ডিসেম্বর
একাত্তরের এই দিনেও বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন উত্তপ্ত ছিল। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মূল লড়াইটা ছিল দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নয়ের মাঝে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল বাংলাদেশের পক্ষে আর যুক্তরাষ্ট্র ছিল পাকিস্তানের পক্ষে।

আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা আশংকা করেছিলেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্ব শিবির দুইভাগে ভাগ হয়ে সংঘাতে জড়িয়ে যেতে পারে। ৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উত্থাপন করার প্রেক্ষাপটে এই দিন সোভিয়েত ইউনিয়ন নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রস্তাবটি ছিল এই যে, “পূর্ব পাকিস্তানে এমন এক রাজনৈতিক নিষ্পত্তি প্রয়োজন যার ফলে বর্তমান সংঘাতের অবসান ঘটবে।” এই প্রস্তাবে পোল্যান্ড সমর্থন জানায়। কিন্তু চীন ভেটো প্রদান করে এবং অন্যরা ভোটদানে নিজেদের বিরত রাখে। এই দিন জাতিসংঘে চীনের প্রতিনিধি বলেন, কোন শর্ত ছাড়াই পাকিস্তান থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে। চীনের প্রধানমন্ত্রী চউ এন লাই ভারতীয় হামলার মুখে পাকিস্তানকে সর্বাত্নক সহায়তা দেয়ার কথা বলেন। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে এই উত্তপ্ত অবস্থাতে যাতে মুক্তিযোদ্ধারা মনোবল হারিয়ে না ফেলেন সে জন্য মুক্তিবাহিনীর সেনাপতি জেনারেল ওসমানী জাতির উদ্দেশ্যে বেতারে ভাষণ দেন।

মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে নৌবাহিনীর যৌথ কমান্ডার চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে সকল বিদেশী জাহাজগুলোকে বন্দরে ছেড়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। বিদেশী জাহাজগুলো এই সময় নিরাপত্তা চাইলে যৌথ কমান্ডার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। পৃথিবীর সব দেশ তখন বুঝতে পারে যে শীঘ্রই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটতে যাচ্ছে। এই দিন লেফটন্যান্ট আরেফিনের নেতৃত্বে চালনা নৌবন্দরে এক তীব্র আক্রমণ সংঘটিত হয়। মুক্তিবাহিনীর এই আক্রমণের ফলে পাক বাহিনীর সব সৈন্য বন্দর ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

৭১ এর এই দিনে আখাউড়া সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয়। মিত্রবাহিনী আখাউড়ার দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক অবরোধ করে ফেলে। এর ফলে পাক হানাদার বাহিনী মিত্রবাহিনীর সাথে যুদ্ধে টিকতে না পেরে আত্মসমর্পণ করে।


৬ ডিসেম্বর
মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় যশোর ও কুড়িগ্রাম। প্রথম কোন জেলা শহর হিসেবে যশোরই প্রথম হানাদার মুক্ত হয়।

মুক্তিযোদ্ধা আর ভারতীয় বাহিনীর যৌথ আক্রমণে যশোর ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকিস্তান বাহিনী। ক্যান্টনমেন্ট ত্যাগ করে তারা খুলনার শিরোমনিতে অবস্থান নেয়। পাক হানাদার বাহিনী যশোর ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে যাওয়ার ফলে এই দিন যশোর শত্রু মুক্ত হয়।

এই দিনে শত্রুমুক্ত হয় কুড়িগ্রাম জেলা। ৮টি থানা নিয়ে সে সময়ে কুড়িগ্রাম একটি মহকুমা ছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধারা তীব্র আক্রমণ চালিয়ে পরাস্ত করে পাক হানাদার বাহিনীকে। এই অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা ভারতীয় বাহিনীর ৬ষ্ঠ মাউন্টেন ডিভিশনের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উপর তীব্র আক্রমণ চালিয়ে ১৪ই নভেম্বর ভুরুঙ্গামারী, ২৮শে নভেম্বর নাগেশ্বরী ও ৩০ই নভেম্বর উত্তর ধরলা মুক্ত করে। মুক্তিবাহিনী ১লা ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম শহরের চারপাশে অবস্থান নেয়। ৬ তারিখ পর্যন্ত পাক হানাদার বাহিনীর উপর নিয়মিত আক্রমণ চালাতে থাকে। অতঃপর ৬ই ডিসেম্বর বিকেলের দিকে শত্রুমুক্ত হয় কুড়িগ্রাম।

এই অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখার জন্য শহীদ লেফটন্যান্ট আশফাকুস সামাদ বীর উত্তম (মরণোত্তর) খেতাব পান। বীর বিক্রম খেতাব অর্জন করেন- শওকত আলী এবং সৈয়দ মনসুর আলী টুংকু। বীর প্রতীক খেতাব পান- বদরুজ্জামান, আব্দুল হাই সরকার, আবদুল আজীজ এবং তারামন বিবি।





৭ ডিসেম্বর
সারাদেশে পালিত হচ্ছে বিজয় উৎসব। এ যেন বিজয়ের উল্লাসে উল্লসিত সারা দেশ। প্রায় সব জায়গায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিজয় মেলা।

১৯৭১ সালের এই দিনে যশোরের কেশবপুর হানাদারমুক্ত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর, আশ-শামসরা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজয় বরণ করে। কেশবপুরকে শত্রুমুক্ত করে মুক্তিবাহিনী রাইফেলের আগায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উঁচিয়ে কেশবপুর থানায় উত্তোলন করার মধ্য দিয়ে কেশবপুর বিজয় উদযাপন করে। এ সময় কেশবপুর উপজেলার সর্বস্ততের মানুষ বিজয় উল্লাসে মেতে উঠেন।

রাজাকার, আল-বদর, আশ-শামসরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এই বিজয় দেখে প্রাণভয়ে কেশবপুর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়। আজকের এই দিনটিকে স্বরণীয় করে রাখতে কেশবপুর পৌরসভার উদ্যোগে একটি বিজয় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।

একের পর এক জায়গা শত্রুমুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা বীরবলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। আজকের এই দিনে জামালপুর, ময়মনসিংহ, মধুপুরও শত্রু মুক্ত হয়।


৮ ডিসেম্বর
মুক্তিযুদ্ধের আগুন ঝড়া দিনগুলোর আজকের এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় ময়মনসিংহের গৌরীপুর। মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৩ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী গৌরীপুরে পৌঁছে। হানাদার বাহিনী ভৈরব রেলপথ দিয়ে গৌরীপুরে পৌঁছে তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকারদের সহায়তায় শুরু করে হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ। পাক বাহিনী নিয়মিত ধ্বংসলীলা চালাতে থাকলে শহরের বাসিন্দারা তাদের ব্যবসা, বসতবাড়ি ফেলে জান বাঁচাতে অন্যত্র চলে যায়।

পাকিস্তান বাহিনীর এই নির্মম অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে, নিজ মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার প্রত্যয়ে গৌরীপুরের মুক্তিকামী মানুষ দলে দলে সংগঠিত হতে থাকে। মুক্তিকামী মানুষেরা গৌরীপুর ডিগ্রী কলেজ প্রাঙ্গনে গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে হানাদার বাহিনীর উপর একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে। গেরিলা হামলার মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধারা গ্রেনেড মেরে ধ্বংস করে গৌরীপুরের রেলপথ, সেতু, গৌরীপুর টেলিফোন একচেঞ্জ। এতে পাক বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা চরম বাধাগ্রস্থ হয়।

১৯৭১ সালের এই দিনেও শত্রুমুক্ত হয় চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার মীরসরাই। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণের মুখে পাক হানাদার বাহিনী মীরসরাই ছেড়ে পালিয়ে যায়। মীরসরাইয়ের বিজয় উল্লাসে সে দিন মাতোয়ারা হয়েছিল সর্বস্তরের মানুষ। মুক্তিযোদ্ধারা মীরসরাই পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ময়দানে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে মীরসরাইয়ের বিজয় উদযাপন করেন সে দিন।

মীরসরাই উপজেলার তালবাড়িয়া রেলষ্টেশন রোডের লোহার ব্রীজ নামক স্থানে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান বাহিনী তাদের দোসর রাজাকার, আল-বদর, আশ-শামস বাহিনীর সহায়তায় অগনিত মুক্তিযোদ্ধা, নারী, শিশু, পুরুষদের ধরে নির্মমভাবে জবাই করে হত্যা করে লোহার ব্রীজের নিচে ফেলে দিত।





৯ ডিসেম্বর
একাত্তরের এই সময়ে দ্রুত মুক্ত হতে থাকে একের পর এক জায়গা। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে টিকতে না পেরে পাক হানাদার বাহিনী পিছু হঠতে থাকে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকে নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য পাকিস্তানের সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা থেমে থাকেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ সময়ে পাকিস্তানকে সহযোগিতা করার পদক্ষেপ নেয়। আজকের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সন তার ৭ম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরের দিকে রওনা দিতে আদেশ দেন। উদ্দেশ্য মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া। কিন্তু তার উদ্দেশ্য সফল হয়নি। কারণ বীর সন্তানদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া মোটেও সহজ কাজ নয়।

মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে যে সমস্ত জায়গাগুলো শত্রুমুক্ত হয় তাদের মধ্যে অন্যতম হলো- দাউদকান্দি, গাইবান্ধা, কপিলমুনি, ত্রিশাল, নকলা, ঈশ্বরগঞ্জ, নেত্রকোনা, পাইকগাছা, কুমারখালী, শ্রীপুর, অভয়নগর, পূর্বধলা, চট্টগ্রামের নাজিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকা।

দাউদকান্দি শত্রুমুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে মূলত মেঘনার সম্পূর্ণ পূর্বাঞ্চল মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। এর আগে কুমিল্লা মুক্ত হওয়ার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে দাউদকান্দির মুক্তিযোদ্ধারা দ্বিগুন উৎসাহ নিয়ে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিবাহিনীর হামলায় টিকতে না পেরে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়।

৭১ এর এই দিনে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মুক্তিবাহিনী সকাল ১১টার দিকে শহরের চারিদিকে অবস্থান নেয়। এর ফলে পাক হানাদারদের এ দেশীয় এজেন্ট আল-বদর বাহিনীর কমান্ডার ফিরোজ বাহিনীর সাথে তুমুল যুদ্ধ হয়। এই খবর পেয়ে জেলা শহরে অবস্থানরত পাকিস্তান সেনাবাহিনী দ্রুত এসে কুমারখালী শহর ঘিরে নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে। মুক্তিবাহিনী আবারো পাল্টা হামলা চালিয়ে রাজাকার, আল-বদর, আশ-শামস বাহিনীর ক্যাম্প ঘিরে ফেলে এবং অতর্কিত হামলা চালালে পাক বাহিনী ও তাদের দোসররা শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়।

সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১১

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতঃ ছবি ব্লগ

চট্টগ্রাম শহরের মধ্যে যে সমুদ্র সৈকতটি বেশি জনপ্রিয় সেটি হলো পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ও নেভালের পাশেই এই জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকতের অবস্থান। প্রতিদিন শত শত পর্যটক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ছুটে যান পতেঙ্গার উদ্দেশ্যে। এই সমুদ্র সৈকতটি ছাড়া চট্টগ্রাম শহরের মধ্যে আরো একটি সমুদ্র সৈকত রয়েছে যেটি সাগরিকা বীচ বা সাগরিকা সমুদ্র সৈকত নামে পরিচিত, যার অবস্থান বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের লাকী গ্রাউন্ড জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পাশে। যদিও এটি এখনো অতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। চলুন, এবার পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের কিছু ছবি দেখা যাক।













































**ক্যামেরাঃ Canon DIGITAL IXUS 95 IS

রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১১

প্রাকৃতিক নৈসর্গে ভরা মহামায়া ও মুহুরী প্রকল্পে একদিন


 


০৯ নভেম্বর'২০১১ইং সকাল বেলা। সবে মাত্র যাত্রা শুরু করলাম। ঘড়িতে সময় তখন সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট। ঈদের ছুটি থাকায় রাস্তা-ঘাট ছিল ফাঁকা। তাই পথে কোন জট পড়লো না। গাড়ি ছুটে চলেছে প্রাকৃতি নৈসর্গে ভরা মহামায়ার দিকে, সামনের দিকে চলছেই আর চলছে। এরইমধ্যে আড্ডা শুরু হয়ে গেল একে অপরের সাথে। সাথে চললো প্রিয় সানি ভাইয়ের মজার মজার সব জোক্স। সানি ভাই আমাদের মাঝে সবচেয়ে সিনিয়র, কিন্তু সবার সাথে উনার সুন্দর সম্পর্ক। যদিও আমাদের মাঝের সব সিনিয়র-জুনিয়রদের সাথে সবারই খুবই ভালো ও সুন্দর সম্পর্ক রয়েছে।

যাওয়ার পথে ভাটিয়ারীতে কিছু হালকা নাস্তা নেয়ার জন্য থামলাম। আমাদের সাথে যখন বন্ধু রানা ও ছোট ভাই আলম ছিল তখন এই নাস্তা কেনার কাজটি তারাই সম্পন্ন করলো। ছোট ভাই আলম একজন আন্তরিক মন-মানসিকতার ছেলে। যে কোন কাজ আন্তরিকতার সাথে সম্পন্ন করে সে। ভাটিয়ারীতে ১৫ মিনিটের মত বিরতি করে আবারো যাত্রা শুরু করলাম মহামায়ার দিকে।


মহামায়া লেক

যে মহামায়ার উদ্দেশ্য আমাদের গাড়ি ছুটে চলেছে সে মহামায়া সম্পর্কে ব্লগার ও পাঠকদের কিছু বর্ণনা দিই। এটি মূলত একটা সেচ প্রকল্প এবং কাপ্তাই লেকের পরে বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম লেক। প্রকল্পটি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধাণে পরিচালনাধীন। এটি চট্টগ্রাম জেলার প্রবেশদ্বার মিরসরাই উপজেলার নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘী বাজারের প্রায় দেড় কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। প্রকল্পের পুরো নাম- মহামায়া ছড়া সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প। ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে শুরু করে ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় ২৬ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা।


আকাশ পানে তাকিয়ে রয় বৃক্ষ


এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে লেক, পাহাড়, ঝর্ণা ও রাবার ড্যাম। লেকের আয়তন ১১ বর্গ কিলোমিটার। লেকে চাইলে আপনি সাতার কাটতে পারেন এবং ইঞ্জিন চালিত নৌকায় চড়তে পারেন। সাতার কাটার সময় তীরের আসে-পাশে থাকা ভালো। কারণ লেকের পানি সাধারণত ভারী হয়ে থাকে, যার ফলে যে কেউ সামান্য সাতার কাটার পর দুর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই প্রকল্পের এলাকায় যে পাহাড়ি ঝর্ণা রয়েছে সেটিতে আপনাকে ইঞ্জিন চালিত নৌকার সাহায্যেই যেতে হবে। ভাড়া গুনতে হবে জনপ্রতি ৪০ টাকা (যাওয়া-আসা)। সংখ্যায় যদি বেশি থাকেন তাহলে একেবারে যাওয়া-আসার জন্য রিজার্ভ ভাড়া করা ভালো। এক্ষেত্রে ভাড়া গুনতে হবে প্রায় ৪০০-৪৫০ টাকা। সময় বেশি লাগেনা, যাওয়া-আসায় ২৫-৩০ মিনিটের মত লাগে। এককথায় বলতে গেলে যারা লেক, পাহাড়, ঝর্ণা এই তিনটি একসাথে ভালবাসেন তাদের জন্য একটা আদর্শ জায়গা এই মহামায়া প্রকল্প। অর্থাৎ মহামায়া একটি সেচ প্রকল্প হলেও এতদ অঞ্চলের আকর্ষণীয় পর্টযন স্পট হিসেবে ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে এটি।
 

ঝর্নার দিকে এগিয়ে চলছে আমাদের ভাড়া করা ইঞ্জিন চালিত নৌকা

ঝর্ণার ঠান্ডা পানি গড়িয়ে পড়ছে তার গন্তব্যের দিকে


যা হোক, এবার আসি আমাদের ভ্রমন কাহিনীতে। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২ ঘন্টা লাগে এই মহামায়াতে পৌঁছতে। ঘড়িতে সময় যখন প্রায় ১১টা তখন আমরা পৌছলাম মহামায়ায়। এর আগে যদিও এই জায়গাতে আমার ২ বার আসা হয়। সেখানে পৌছে যাওয়ার পথে কিনে নেয়া হালকা নাস্তা সেড়ে নিলাম সবাই। তারপর শুরু হলো ছবি তোলার পর্ব। যে যার মত পারলাম ছবি তুললাম। প্রকল্পের মধ্যে থাকা পাহাড়ে চষে বেড়ালাম। পাহাড়ে ঘুরাঘুরি শেষ করে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করে রওনা দিলাম পাহাড়ী ঝর্ণা দর্শনে। ১২ মিনিটেই পৌছে গিয়েছিলাম ঝর্ণার স্থানে। গত ২ বারের চেয়ে এবারের ঝর্ণার স্থানটি বেশ ঝুকিপূর্ণ মনে হলো। তাই আমরা কয়েকজন ঝর্ণার মূল স্থানে গেলাম না। যদিও আমাদের বেশ কয়েকজন তাদের অদম্য ইচ্ছা শক্তির কারণে ঝর্ণার মূল জায়গা এমনকি উৎপত্তিস্থল খুঁজতে গিয়ে আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যায়। যদিও পরবর্তীতে তারা আমাদের মাঝে ফিরে এসেছিল। ঝর্ণা দর্শন শেষে আমরা ফিরে এলাম লেকের তীরে। লেকের তীরে পৌঁছার পর দুপুরের খাবারের জন্য আমরা গেলাম মিরসরাইয়ের বারৈয়ারহাটে।




মুহুরী প্রকল্পের বাঁধ


বারৈয়ারহাট থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে রওনা হলাম মিরসরাইয়ের আরেক পর্যটন স্পট মুহুরী প্রকল্পের উদ্দেশ্যে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ বাজার থেকে ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে মুহুরী সেচ প্রকল্প চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার কিয়দাংশ এবং ফেনী জেলার ফেনী, সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার কিয়দাংশের সর্বমোট ৪০,০৮০ হেক্টর (গ্রস) জায়গা জুড়ে এই প্রকল্পের অবস্থান। ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছর থেকে শুরু হয়ে ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় ১৫৬ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বার্ষিক ৭৫,০০০ মেট্রিক টন ফসল উৎপাদন হয়। এই মুহুরী প্রকল্প এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মৎস্য জোন হিসেবে পরিচিত। এককথায় বলা যায় বাংলাদেশে মৎস্য চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছে এই প্রকল্প। দেশের অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে এখানে মৎস্য প্রকল্প গড়ে তুলেছে; বসুন্ধরা গ্রুপ, মেরিডিয়ান গ্রুপ, ক্লিফটন গ্রুপ, আবুল খায়ের কোম্পানি, রিঙ্কু ফিশ প্রজেক্ট সহ প্রায় দুই হাজার মৎস্য প্রকল্প রয়েছে এখানে। বছরে মত্স্য চাষ থেকে আয় হয় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা


মুহুরী প্রকল্পে নির্মিত দেশের প্রথম উইন্ড মিল

বাঁধের অপর পাশে ভরা নদী


খুবই সুন্দর একটা জায়গা এই মুহুরী প্রকল্প। যারা চট্টগ্রামের নেভালে গিয়েছেন মুহুরী প্রকল্পের প্রবেশদ্বার অনেকটা চট্টগ্রামের নেভালের মত দেখতে। এখানে এলে আপনি দেখতে পাবেন উইন্ড মিল, যা দেশে প্রথম নির্মিত। এই প্রকল্পের আওতাধীন যে বাঁধটি রয়েছে তা ফেনী নদীর উপর দিয়ে নির্মিত হয়েছে। বাঁধের একপাশে দেখতে পাবেন ভরা নদী আর অন্য পাশে দেখতে পাবেন প্রায় পানি শুন্য নদী। নদী যাদের কাছে টানে তাদের জন্য অন্যতম একটা প্রিয় জায়গা হতে পারে এটি। নৌকা করে নদীতে ঘুরে বেড়াতে পারেন চাইলে। শীতকাল চলে আসছে ধীরে ধীরে। আর এই শীত মৌসুমে মুহুরী প্রকল্পের অন্যতম আকর্ষণ সাইবেরিয়ার অতিথি পাখি। যদিও গুটি কয়েক সাইবেরিয় অতিথি পাখি আমাদের চোখে পড়েছে কারণ শীত মৌসুম এখনো পরিপূর্ণভাবে আসেনি এই অঞ্চলে।




সবাই মিলে অনেক আনন্দ করলাম মুহুরী প্রকল্প সহ পুরো ভ্রমণে। আমাদের গ্রুপের বেশ কয়েকজনের পড়াশোনা প্রায় শেষ পর্যায়ে। সামনের কোন ভ্রমণে তাদের কাউকে পাওয়া যাবে না হয়ত। এছাড়া আমাদের গ্রুপটির সবাই অর্থাৎ সব সিনিয়র-জুনিয়র একে অপরের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক। তাই এই ভ্রমণটি স্বরণীয় হয়ে থাকবে অন্তত আমার কাছে। সন্ধ্যা যখন নেমে আসছিল তখন রওনা হলাম বাসার উদ্দেশ্যে। চট্টগ্রামে পৌঁছে বন্ধু রানার বাসায় সবাই কিছু সময় অতিবাহিত করার পর প্রত্যেকে নিজ নিজ বাসায় চলে আসলাম। এভাবে সমাপ্তি ঘটলো সুন্দর একটা ভ্রমণের।

শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০১১

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতঃ ছবি ব্লগ

গত ০৭ নভেম্বর ছিল ঈদ-উল-আজহা। ভ্রমণ পিপাসু অনেকেই আছেন যারা এই ঈদের ছুটিতে দূরে কোথাও বেড়াতে গিয়েছেন। অনেকেরই পছন্দ পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। তাই এই ঈদ উপলক্ষ্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আমার তোলা কয়েকটি ছবি শেয়ার করলাম আপনাদের সাথে। চলুন দেখে নেয়া যাক ছবিগুলো।
































 












বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১১

মনে পড়ে যায় শৈশবের সেই দিনগুলো


সেদিন অনেক দিন পর নানার বাড়িতে গেলামঅনেকদিন পর বলতে প্রায় ৪/৫ মাস পর নাগরিক কিংবা পড়ালেখার ব্যস্ততার কারণে আগের মত তেমন কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয়নাহয়ত সেদিনও যাওয়া হতোনানানার বাড়ির পাশে আমার চাচাত বোনের শ্বশুর বাড়িতে মেজবানের দাওয়াত ছিলযার কারণে ঐদিকে যাওয়ার কারনে একসাথে নানুদের দেখে আসা

নানার বাড়িতে ঢুকে নানুর সাথে কুশলাদি বিনিময় করার পর নানু আমাকে জিজ্ঞেস করলো- পড়ালেখার কি অবস্থা? আমি বললাম সামনে পরীক্ষা, দোয়া করিওনানু বললো- পরীক্ষা দিতে দিতে তোর আর বিয়ে করা হবেনাকথাটা শুনে আমার পাশে থাকা ছোট মামা, মামি আর পিচ্ছি কাজিনরা খুব করে হাসলামতখন নানুকে বললাম- গ্রাজুয়েশন শেষ হতে আর বেশি দিন নেই, তখন তোমরা না হয় তোমাদের নাতিনকে নিয়ে এসো 

নানার বাড়ির পাশেই রয়েছে সুন্দর একটা পুকুরশৈশবে যখন নানার বাড়িতে যেতাম তখন কাজিনরা মিলে পুকুরে লাফালাফি করে গোসল করার স্বাদ মিঠাতাম, পানিতে লাফালাফি করার কারণে চোখ যখন লাল হয়ে যেত তখন পুকুরে দুষ্টুমির পর্ব শেষ হত বিশেষ করে যখন বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হত তখন কয়েক দিনের জন্য নানার বাড়িতে গিয়ে থাকা হতকারণ ঐ সময়ে সব কাজিনরা নানার বাড়িতে কয়েকদিনের জন্য যেতামযাওয়ার সাথে সাথে শুরু হত আমাদের দস্যি-পনানাস্তা করেই কাজিনদের সাথে বের হয়ে পড়তাম দৌড়াদৌড়িতেনানার বাড়ির পাশেই বিল থাকার কারণে বিলের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়াতামবিলের পাশেই রয়েছে খালসেই খালে সাতার কাটতামশীতের মৌসুমে বিলে ক্রিকেট-ফুটবল খেলতামসারাদিনের এই দস্যি-পনা শেষে রাতে যখন ঘুমাতে যেতাম তখন শুরু হত অন্যান্য কাজিনদের জ্বীন-ভূতের ভয় লাগানোর পালা কাজিনদের মনে জ্বীন-ভূতের ভয় ঢুকিয়ে দেয়ার কারণে পরেরদিন সকালে মা'র বকা শুনতে হত কারণ মা'র কাছে কাজিনদের কর্তৃক আমার বিরুদ্ধে নালিশ যেত যে আমি কাজিনদের মনে জ্বীন-ভূতের ভয়-ভীতির সঞ্চার করেছি

কিন্তু নানার বাড়ির আগের সেই জৌলুস এখন আর নেইকারণ সময়ের পরিক্রমায় সব কিছু যেন পাল্টে গেছেনানু ভাইয়াও মারা গিয়েছে আজ প্রায় ৩ বছর হলো আগের মত যাওয়া হয়না নানার বাড়িতেতাছাড়া দিন দিন বয়সটা বাড়ছেআগের সেই বয়স আর নেই যে মন চাইলেই শৈশবের মত ছুটাছুটি করবো

সেদিন যখন নানার বাড়িতে গেলাম তখন কেন জানি শৈশবের কথা খুব করে মনে পড়ে গেল যে পুকুরে গোসল করার সময় অসম্ভব দুষ্টুমি করতাম সেই পুকুর ঘাটে বেশ কিছু সময় বসে ছিলামকেন জানি নানার বাড়ির পুকুরটা আমার বেশ ভাল লাগেপুকুরের চারিদিকে গাছ, চমৎকার মৃদু হাওয়াদেখলাম ছোট ছোট মাছ আপন খুশিতে চষে বেড়াচ্ছে দল-বল নিয়ে

নানার বাড়িতে যাওয়ার আগে একই দিন সকালে নানুকে ফোন করেছিলাম যে আমরা ঐদিকে যাবতাই নানুকে অনুরোধ করলাম- কয়েকদিনের জন্য আমাদের বাড়িতে যেন বেড়াতে আসেচাচাত বোনের শ্বশুর বাড়ি থেকে মেজবানের দাওয়াত খেয়ে আসার পথে নানার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে সাথে করে নানুকে নিয়ে এসেছিলাম আমাদের বাড়িতে

মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০১১

মায়া সভ্যতা



১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে মধ্য আমেরিকার নিম্নভূমির বনাঞ্চলে এক অদ্ভুত সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। “মায়া” নামে এই সভ্যতা যে জনগোষ্ঠী নির্মাণ করেছিল, তারা অধিকাংশ প্রাথমিক সভ্যতা নির্মাণকারীদের মতো শহরে জীবন যাপন করত না। বরং তাদের বসবাস ছিল ছোট ছোট কৃষি-গ্রামে। তারা পিরামিডের মতো দেখতে উপাসনাগৃহ ও উৎসবস্থল তৈরি করেছিল। এগুলো ছিল তাদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। মায়াদের ৪টি প্রধান কেন্দ্র ও অনেকগুলো ছোট ছোট কেন্দ্র ছিল। প্রধান কেন্দ্রগুলোর একেকটি থেকে দেশের প্রায় এক চতুর্থাংশ এলাকায় শাসনকার্য চালানো হত।


মায়াদের তৈরিকৃত একটি উপাসনাগৃহ

মায়া সভ্যতায় চিত্র-লিখন পদ্ধতি ও নির্ভুল পঞ্জিকা ব্যবস্থা চালু ছিল। তাদের জ্যোতির্বিদরা সূর্যগ্রহনের দিন তারিখ সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বানী করতে পারত। মায়া শিল্পীরা পাথর খোদাই শিল্পে ছিল অতুলনীয়।


মায়া সভ্যতার পঞ্জিকা

কিন্তু ৯০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে মায়ারা তাদের সভ্যতার কেন্দ্রগুলো ছেড়ে চলে যায় এবং তাদের স্থিতিশীল জীবনব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। ১৫ শতকে স্পেনীয়রা যখন ওই এলাকায় আসে তখন নিজেদের মধ্যে লড়াই করতে করতে নিঃশেষ প্রায় মায়া জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে তাদের খুব বেশি প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়নি।


মায়া সভ্যতার একটি প্রাচীন নিদর্শন

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, সেই মায়া সভ্যতার বর্তমান অবস্থান কোথায়? বর্তমানে মায়া সভ্যতার অবস্থান হচ্ছে- মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চল, গুয়াতেমালা, বেলিজ, এল সালভেদরের উত্তরাঞ্চল এবং হন্ডুরাসের পশ্চিমাঞ্চলে।


প্রাচীন মায়া সভ্যতার বর্তমান মানচিত্র



Share it button

সমতল Copyright © 2011 | Template created by O Pregador | Powered by Blogger